মাদারীপুর: সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ মাদারীপুরের বিভিন্ন মহলে আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাড়িয়েছে মাদারীপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী শকুনী লেকের নাম পরিবর্তন করে “ডিসি লেক” নাম করনের বিষয়টি। নাম পরিবর্তনের আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তার কোন উপযুক্ত ব্যাখ্যা উপস্থাপন না করে বা সম্পূর্ণ বিষয়টি গোপন রেখে এই উদ্যোগ নেওয়াতে মাদারীপুরবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ধারণা করা হয় জেলা প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠ ও সুবিধা ভোগী একটি চক্র এই নাম পরিবর্তনে ইন্ধন দাতা হয়ে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যাক্তি স্বার্থ বা গোষ্ঠী স্বার্থ এই নাম পরিবর্তন প্রচেষ্টার প্রধান কারন বলে গুঞ্জন রয়েছে। জন্মলগ্ন হতেই লেকটির নাম শকুনী লেক। শতাধিক বছরের পুরনো শকুনি মৌজায় অবস্থিত বলে খনন কালের শুরু থেকেই লেকটি শকুনি লেক নামে পরিচিত হয়ে ওঠে এবং এ যাবৎ প্রজন্ম পরম্পরায় মাদারীপুরবাসীর মধ্যে তা নিয়ে কোনো আপত্তি বা বিতর্ক পরিলক্ষিত হয় নি।
ঐতিহাসিকদের মতে, আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙ্গন কবলিত হয়ে শতাব্দী প্রাচীন পুরনো মাদারীপুর শহর নদী গর্ভে বিলীন হলে তৎকালীন বৃটিশ প্রশাসন ১৯৪৩ সালে লেকটি খনন করে এর চারপাশে নতুন শহর স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়। চল্লিশের দশকে এ অঞ্চলে মাটিকাটা শ্রমিকের অভাব থাকায় ২০ একর আয়তনের এই লেক খনন করার জন্য তৎকালীন বৃটিশ প্রশাসন ভারতের বিহার ও উড়িষ্যা অঞ্চল থেকে দুই হাজার শ্রমিক ভাড়া করে আনে। নয় মাসে লেকটির খনন কাজ সম্পন্ন হয়।
এটি এ অঞ্চলের দীর্ঘতম লেক হিসেবে পরিচিত। মাদারীপুর জেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই লেকের আয়তন ১,০১,১৭২ বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য ৪৮৬ মিটার ও প্রস্থ ১৯৮ মিটার। ১৮৭৫ সালে জমিজমার কাগজপত্রে শকুনী মৌজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সেই শকুনী মৌজায় অবস্থিত বলে স্বাভাবিক ভাবেই লেকটিরও শকুনী লেক নাম করন হয়। তার পরবর্তীতে প্রজন্ম পরস্পরায় এই লেকটি স্থনীয়দের বিনোদন, সামাজিক কর্মকাণ্ড ও প্রশান্তির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
গত দশকে লেকটি সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিলে ২০১৩ সালে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে লেকটির সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পন্ন করা হয়। যার ফলে লেকটিকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু মুরাল, শহীদ কানন, শিশু পার্ক, স্বাধীনতা অঙ্গন, এম্ফি থিয়েটার মঞ্চ, পাকা ঘাট, ওয়াচ টাওয়ারসহ দৃষ্টি নন্দন নানা উপকরনে লেকটি মাদারীপুরবাসী সহ আশেপাশে নানা অঞ্চলের মানুষের কাছে একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।
সম্প্রতি এই লেকের নাম পরিবর্তন নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে তাতে কিছু লোক তাদের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য বা কোন ব্যক্তি বিশেষের কাছের মানুষ হওয়ার জন্য নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারনা করা হয়। জানা যায় মাদারীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন বিশ্বাসের মেয়াদকালে একটি মিটিংয়ে এ প্রস্তাবের সূচনা হয়। সে মিটিংয়ে উপস্থিত সুধী মহলের বেশিরভাগই নাম পরিবর্তন না করার পক্ষে কথা বলেন।
সে কারনে দীর্ঘদিন সে আলোচনা স্থগিত ছিল। তবে সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক তার কর্ম দিবসের শেষ দিকে শকুনী লেককে ডিসি লেক নামে নামকরনের নির্দেশনা দিয়ে যান। যার ফলশ্রুতিতে মাদারীপুর বাসীর মধ্যে ক্রমাগত ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। সচেতন মহল এই নাম পরিবর্তন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যাপক ভাবে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে তাদের মতামত দিতে শুরু করলে শুরু হয় প্রতিবাদের ঝড়।